বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১৩ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদক : টেকনাফে তল্লাশী চৌকিতে উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে পালানোর চেষ্টাকালে ‘লাইসেন্স বিহীন’ গাড়ীসহ গাজীপুরে কর্মরত এক সাংবাদিককে আটক করেছে বিজিবি; যার বিরুদ্ধে গাজীপুরের পাশাপশি দেশের বিভিন্ন থানায় ধর্ষণ চেষ্টাসহ কয়েকটি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বিজিবির টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট ফয়সল হাসান খান জানান, রোববার রাতে শহীদ এটিএম জাফর আলম আরাকান সড়কের ( কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক ) টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বিজিবির হোয়াইক্যং তল্লাশী চৌকিতে এ অভিযান চালানো হয়।
আটক মো. আবুল কাশেম (৪০) গাজীপুর সদরের জয়দেবপুর থানার ভবানীপুর এলাকার আবু সামার ছেলে। সে বিয়ের সূত্রে সেখানে বসবাস করলেও তার আদিনিবাস টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ঝিমংখালী এলাকায়।
আবুল কাশেমের কাছ থেকে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার গাজীপুর স্টাফ রিপোর্টার পরিচয় সম্বলিত একটি কার্ড পাওয়া গেছে বলে জানান বিজিবির এ কর্মকর্তা।
লে. কর্ণেল ফয়সল বলেন, রোববার রাতে টেকনাফ দিক থেকে আসা একটি প্রাইভেট কার বিজিবির হোয়াইক্যং তল্লাশী চৌকিতে পৌঁছালে থামানোর নির্দেশ দেয়া হয়। এসময় চালক গাড়ীটি না থামিয়ে তল্লাশী চৌকি অতিক্রম করার চেষ্টা চালায়।
“ পরে বিজিবির সদস্যরা সন্দেহজনক গাড়ীটি থামাতে সক্ষম হয়। এসময় তল্লাশী করার চেষ্টা করলেও গাড়ীর ভিতরে থাকা এক যুবক দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ শুরু করে বাধা প্রদান করে। ”
বিজিবির এ কর্মকর্তা বলেন, “ পরে বিজিবির সদস্যরা প্রাইভেট কারটির বৈধ কোন কাগজপত্র দেখাতে না পারায় উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণকারি যুবককে টেকনাফ থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করেছে। এসময় তার কাছ থেকে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার গাজীপুর জেলা প্রতিনিধির একটি আইডি কার্ড জব্দ করা হয়। ”
টেকনাফ থানার ওসি মো. হাফিজুর রহমান বলেন, সোমবার সকালে জব্দ করা একটি প্রাইভেট কারসহ বিজিবির টেকনাফ ব্যাটালিয়ানের সদস্যরা এক যুবককে থানায় হস্তান্তর করা হয়। সে পুলিশের কাছে যুগান্তর পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত থাকার তথ্য জানায়। পরে তার ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিতে গাজীপুর জেলা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করা হয়।
“ গাজীপুর জেলা পুলিশের দেয়া তথ্য মতে, মো. আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে গাজীপুরের পাশাপাশি দেশের ভিন্ন থানায় ধর্ষণ চেষ্টা, নারী নির্যাতন, চাঁদাবাজী, প্রতারণা ও বন-আইনসহ নানা অভিযোগে ডজনখানেক মামলা রয়েছে। এসব মামলার মধ্যে কয়েকটিতে সে দীর্ঘদিন ধরে পলাতক রয়েছে। ”
ওসি জানান, পলাতক এই আসামীকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে গাজীপুর জেলা পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে। তাকে গাজীপুর জেলা পুলিশের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
এদিকে মো. আবুল কাশেমকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিয়ে গাজীপুরের কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে কথা হয়।
গাজীপুরের স্থানীয় সাংবাদিক সাজ্জাদ চৌধুরী বলেন, গ্রেপ্তার আবুল কাশেম যুগান্তরের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত রয়েছে। প্রচার রয়েছে যুগান্তরের প্রকাশক সালমা ইসলামের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সে গাজীপুরে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশনের প্রতিনিধি নিয়োগে দীর্ঘদিন অনৈতিক অর্থ লেনদেন করে আসছিল।
“ ইতিপূর্বে আবুল কাশেম যমুনা টেলিভিশনের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগের কথা বলে স্থানীয় সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলমের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা আদায় করে। পরে তার (জাহাঙ্গীর) নিয়োগের এক বছর পর ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে আরেকজনকে নিয়োগ দেয়। এ নিয়ে গাজীপুর আদালতে আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে একটি প্রতারণা মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ”
গাজীপুরের স্থানীয় এ সাংবাদিক বলেন, “ আবুল কাশেম সাংবাদিকতার পরিচয়ে গাজীপুরে দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণ চেষ্টা, বন-আইন, চাঁদাবাজী ও প্রতারণাসহ নানা অপকর্ম সংঘটন করে আসছে। তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগে গাজীপুরসহ বিভিন্ন থানায় ডজনখানেক মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ”
গ্রেপ্তার আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে যুগান্তরের প্রতিনিধি নিয়োগের নামে অর্থ-বাণিজ্যের ঘটনা শুধু গাজীপুর নয়, সম্প্রতি পত্রিকাটির কক্সবাজারেও একযোগে জেলা ও কয়েকটি উপজেলা পর্যায়ের প্রতিনিধি বদলের ঘটনায় সে জড়িত বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল।
ফরহাদ বলেন, যুগান্তরের প্রকাশক সালমা ইসলামের সঙ্গে সুসম্পর্কের সুযোগে এই প্রতারক আবুল কাশেম মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে কক্সবাজারে এক যোগে জেলা প্রতিনিধিসহ কক্সবাজার সদর, টেকনাফ, উখিয়া, চকরিয়া ও মহেশখালী উপজেলা প্রতিনিধিদের বাদ দিয়ে নতুন করে প্রতিনিধি নিয়োগ করিয়েছে।
“ যুগান্তর পত্রিকার প্রতিনিধি হিসেবে বাদ যাওয়া সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, এসব প্রতিনিধিদের বাদ দিতে নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের কাছ থেকে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আবুল কাশেম আদায় করেছে ” বলেন কক্সবাজারের স্থানীয় এই সাংবাদিক নেতা।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply